বনলতা সেন-জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

 

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রেরপর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌এতদিন কোথায় ছিলেন?

পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

 

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

43 responses to “বনলতা সেন-জীবনানন্দ দাশ

  1. আমি এই কবিতাটি যতই পড়ি ততই যেনো বাংলা সাহিত্যের প্রতি নতুন করে প্রেমে পড়ি।দুর্ভাগ্য আমার আমি ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করি!!!

  2. পিংব্যাকঃ মুহাম্মদ-হানির মধুর রাতে (তিনটি প্যারোডি কবিতা) – CodeSmite Lab·

  3. কেন কবি তুমি সব বলে দিলে নিরদিদায় । তুমি তো আমার প্রেমের সম্পূর্ন ছন্দ তবে কেন লাইণের শেষটা খুজে পাই না ………………………….

  4. আমি নিজেও কবিতা লিখি তাই আমারমতো করে চিন্তা করে দেখলাম কাহিনীময় রোমান্টিক কবিতা,কবিতার ভিতরে আবেগ এবং সৌন্দর্যতা প্রকাশ

  5. এটি শুধু কবিতা নয়, দু’চোখ ভরা অসিম স্বপ্ন ও ভালবাসাও সত্যি আমি যতবার পড়ি আমার চোখে সবকিছু ছবির মত যেন ভেসে উঠে তখন আমি সব উপলব্দি করতে পারি আর নিজে থেকে যেন স্বপ্নে হারিয়ে যায় নিজেরি অজান্তে।
    সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

    তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’

    পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান